টানা ভারী বৃষ্টিপাত এবং ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৪টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর ফলে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার ৩০টিরও বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে, যার জেরে হাজার হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বিশেষ করে পরশুরাম উপজেলার সঙ্গে জেলা শহরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, কারণ রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে।
হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক পরিবার তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। ইতিমধ্যে প্লাবিত গ্রামগুলো থেকে অন্তত অর্ধশতাধিক পরিবারের ১৩৩ জন স্থানীয় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে নদীগুলোর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা নদী তীরবর্তী এলাকা এবং বাঁধগুলোর জন্য গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করেছে।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জরুরি সহায়তা পৌঁছে দিতে কাজ চলছে। প্রয়োজনে আরও আশ্রয়কেন্দ্র খুলে প্লাবিত মানুষকে সেখানে সরিয়ে নেওয়া হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ভাঙনের স্থানগুলো চিহ্নিত করে মেরামতের চেষ্টা করছেন। তবে টানা বর্ষণের কারণে এই কাজ ব্যাহত হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ সবাইকে সতর্ক থাকতে আহ্বান জানিয়েছে।
পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুর রহমান জানিয়েছেন, তারা মাঠপর্যায়ে সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, বিভিন্ন পয়েন্টে নতুন করে ভাঙন দেখা দেওয়ায় আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে, এবং মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে শুরু করেছে।
ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহরিয়া ইসলাম জানিয়েছেন, তাদের উপজেলায় তিনটি নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের চারটি স্থানে ভাঙনের খবর পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে শতাধিক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন, এবং তাদের জন্য শুকনো ও রান্না করা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া, বুধবার (৯ জুলাই) উপজেলার উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চলমান অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন যে, ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় ৪০০ করে মোট ৮০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও, দুর্গতদের মাঝে রান্না করা খাবার সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান জানিয়েছেন, জেলায় টানা তিন দিন ধরে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বুধবার (৯ জুলাই) সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩০৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি আরও জানান যে, গতকালের তুলনায় বৃষ্টিপাত কমেছে এবং আগামী দিনেও জেলাজুড়ে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।