পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসবের আনন্দ-উচ্ছ্বাস শেষে বিজয়া দশমীর দিনে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লোনাজলে প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এই উৎসবের। বৈরী আবহাওয়া ও বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে সৃষ্ট বৃষ্টি, উত্তাল সাগর ও ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত উপেক্ষা করে বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) বিকেলে সৈকত পরিণত হয় লাখো মানুষের মিলনমেলায়।
ভোর থেকে বৃষ্টি থাকলেও ভক্তদের উৎসাহে কোনো ঘাটতি ছিল না। দুপুর আড়াইটা থেকেই কক্সবাজার জেলার সাতটি উপজেলার বিভিন্ন মণ্ডপ থেকে ট্রাক বোঝাই করে প্রতিমা নিয়ে আসা শুরু হয়। পাশ্ববর্তী পার্বত্য জেলা বান্দরবানের লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি থেকেও কিছু প্রতিমা বিসর্জনের জন্য সৈকতে আনা হয়।
বিকেল চারটার দিকে লাবণী পয়েন্টের বিজয়া মঞ্চ সংলগ্ন এক বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভক্তদের সমাগম ঘটে। সকালে মণ্ডপে মণ্ডপে দেবীর চরণে সিঁদুর নিবেদন করেন বিবাহিত নারীরা, এরপর চলে পরস্পরের মধ্যে সিঁদুর খেলা। বিকেলে বিসর্জনস্থলে ভক্তরা দেবীর কাছে শেষবারের মতো প্রার্থনা জানান।
বিকেল পাঁচটায় পুরোহিতের মন্ত্রপাঠের পর আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জন। মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে একে একে ১২৭টি প্রতিমা সাগরের ঢেউয়ে বিলীন করে দেওয়া হয়। চকরিয়া ও পেকুয়ার মণ্ডপগুলোর প্রতিমা মাতামুহুরী নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয়।
বিসর্জন অনুষ্ঠানটি এক সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছিল। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মের হাজারো মানুষ এই আয়োজনে অংশ নেন, যা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক নজিরবিহীন চিত্র তৈরি করে।
এবারের বিসর্জন অনুষ্ঠানে একটি বিশেষ মানবিক আবেদন যুক্ত হয়। সৈকতের মঞ্চ থেকে ‘ফিলিস্তিন মুক্তির’ আহ্বান জানানো হয়। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও পূজা উদযাপন কমিটির তত্ত্বাবধানে আয়োজিত এই বিসর্জন অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রধানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
লাখো মানুষের সমাগম ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে বিসর্জন ঘিরে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক আপেল মাহমুদ জানান, প্রায় পাঁচ শতাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন ছিল। সেনাবাহিনী, র্যাব, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, দমকল ও লাইফগার্ডদের সমন্বয়ে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়, যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।
ভক্তদের চোখে বিদায়ের অশ্রু থাকলেও, আগামী বছর আবার মা দুর্গা ফিরে আসবেন— এই আশ্বাসেই শেষ হলো এবারের শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।