চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ১০ নং সলিমপুর ইউনিয়নের জঙ্গল সলিমপুর ছিন্নমূল ও পার্শ্ববর্তী আলীনগর এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত শুক্রবার (৩ অক্টোবর) রাত থেকে শনিবার (৪ অক্টোবর) দুপুর পর্যন্ত বিরতিহীন সংঘর্ষে একজন যুবক নিহত হয়েছেন এবং উভয়পক্ষের কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসা সূত্রে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্র ও পুলিশের বরাত অনুযায়ী, সংঘর্ষটি শুক্রবার রাত ১০টার দিকে শুরু হয় এবং শনিবার দুপুর পর্যন্ত চলতে থাকে। আহতরা কোপ ও গুলিবিদ্ধ হওয়ার চিহ্ন নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, হাসপাতালে নেওয়ার পর ‘কাল্লু’ নামে পরিচিত এক ব্যক্তিকে মৃত ঘোষণা করা হয়। নিহতের বিস্তারিত পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি।
ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সোহেল রানা বলেন, “জঙ্গলে সংঘর্ষ ও গুলির শব্দ শুনে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। প্রথম দফায় চাপাতির কোপে আহত অবস্থায় প্রায় ১৫ জনকে উদ্ধার করে চমেকে পাঠানো হয়েছে; সেখানে একজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। আহতদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকার সরকারি পাহাড়-টিলা দখল করে প্লট বানিয়ে বিক্রির একটি বিস্তৃত অবৈধ ব্যবসা চলে, যার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে ছিলেন ইয়াছিন নামের এক ব্যক্তি। ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সলিমপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক রোকন উদ্দিন মেম্বারও ওই এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা শুরু করলে উত্তেজনা বাড়ে।
স্থানীয়দের দাবি অনুযায়ী, উত্তেজনার মূল কারণ হলো রোকন মেম্বারের অনুসারীদের একটি ভাইরাল হওয়া অডিও, যেখানে পাহাড় রক্ষা-সংক্রান্ত অবস্থান ও অস্ত্র সংগ্রহের কথা উল্লেখ রয়েছে।
ঘটনার সূত্র অনুযায়ী, শুক্রবার রাত ১০টা থেকে রোকন মেম্বারের অনুসারীরা আকবরশাহ এলাকার বড় গ্যাসলাইন সংলগ্ন মাঠ, ফকিরহাট ও জলিল এলাকায় জড়ো হতে থাকে। এরপর রোকন গ্রুপ শতাধিক সঙ্গী নিয়ে আলীনগর ও সলিমপুরটিতে হামলা চালায়। পাল্টা প্রতিরোধে ইয়াছিন গ্রুপেও কয়েকশ’ সদস্য যুদ্ধবন্দুক ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে অংশ নেয়।
সংঘর্ষের সময় বহু বাড়ি ভাঙা ও কুপিয়ে নষ্ট করা হয়েছে, এমনকি দোকানপাটে লুটপাটেরও ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয়দের দাবি, উভয়পক্ষ মিলিয়ে কমপক্ষে ৪০ জনকে জিম্মি করা হয়েছে—ইয়াছিন গ্রুপ রোকন গ্রুপের প্রায় ১৫ জনকে এবং রোকন গ্রুপ ইয়াছিন গ্রুপের প্রায় ২৫ জনকে আটক করেছে।
চমেকে ভর্তি হওয়া আহতদের মধ্যে যাদের নাম জানা গেছে, তারা হলেন: জাবেদ প্রকাশ (৩৮), মো. জাকির (৪৮), মো. তানভীর হোসেন (২৩), সিরাজুল ইসলাম (৪৩), ফজলুল করিম (৩২), ইসমাইল হোসেন বাবু (৩০), জাহিদুল ইসলাম (১৯), সৌরভ বড়ুয়া (১৭), মো. পারভেজ (২০), মো. নুরুল আলম (৪০), শুক্কুর আলম (২২), মো. রায়হান (১৮), মো. শামীম (২৯), মোহাম্মদ হারুন (৪৫), মাসুদ (৩৫) ও এমদাদুল হক (৪৭)। বাকিদের পরিচয় সংগ্রহের কাজ চলছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, রাজনৈতিক প্রভাবশালী কিছু মহলের সাহায্যে দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়-টিলাগুলো কেটে প্লট বানিয়ে বিক্রি করা হচ্ছিল। তাদের মতে, নির্দিষ্ট সময়ে প্রশাসনের অভিযান হলেও সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর অপরাধী চক্রের হাতে আবার এলাকা শাসিত হচ্ছে, এবং এটাই সংঘর্ষের মূল কারণ।
পুলিশের ইনচার্জ সোহেল রানা জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী অতিরিক্ত দল মোতায়েন করা হবে। তিনি সংঘর্ষ ও লুটপাটের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এবং ঘটনাটির বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন। ঘটনার বিষয়ে রোকন উদ্দিন মেম্বার ও ইয়াছিনের বক্তব্য নিতে সাংবাদিকরা যোগাযোগের চেষ্টা করলেও, দু’জনের কেউই ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।