চট্টগ্রাম নগরীতে সাড়ে ৫৪ কিলোমিটার দীর্ঘ মনোরেল নির্মাণ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের (ফিল্ড সার্ভে) কাজ শুরু হয়েছে। গত সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) থেকে শুরু হওয়া এই সার্ভে আগামী সাত থেকে আট মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে। এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো ডিপো নির্মাণের জন্য উপযুক্ত ৫০ একর ভূমি চিহ্নিত করা এবং প্রস্তাবিত রুটগুলো বর্তমানে বাস্তবসম্মত কিনা, তা খতিয়ে দেখা।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) এই মনোরেল নির্মাণের উদ্যোগ নিলেও, এটি বাস্তবায়িত হচ্ছে বিদেশি দুই প্রতিষ্ঠান— ‘আরব কন্ট্রাক্টরস ও ওরাসকম পেনিনসুলা কনসোর্টিয়াম’-এর মাধ্যমে। এটি একটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারি (পিপিপি) প্রকল্প, যেখানে বিনিয়োগ করছে এনএএস ইনভেস্টমেন্ট ও ন্যাশনাল ব্যাংক অব ইজিপ্ট। গত ১ জুন চসিক ও কনসোর্টিয়ামের মধ্যে এ বিষয়ে সমঝোতা স্মারক চুক্তি (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে।
চসিকের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের পর, সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন গত ২৫ জুন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (বিডা) ডিও লেটার দেন। এর প্রেক্ষিতে বিডা চেয়ারম্যান গত ১০ সেপ্টেম্বর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই ও বাস্তবায়নে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য চিঠি দেন।
মনোরেলের জন্য একটি ডিপো নির্মাণ করতে হবে, যেখানে ওয়ার্কশপ ও অফিস থাকবে। ডিপোর জন্য প্রায় ৫০ একর জায়গা প্রয়োজন, যা মূল রুটের কাছাকাছি হতে হবে। প্রাথমিকভাবে ডিপো নির্মাণের জন্য কালুরঘাট, নন্দীরহাট (চসিকের ১ নং ওয়ার্ড), পতেঙ্গা এবং কাট্টলী—এই চারটি এলাকা বিবেচনা করা হচ্ছে।
সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন জানান, নির্ধারণ করা চারটি পয়েন্ট থেকে একটি বাছাই করা হবে। তিনি বলেন, ডিপোর জন্য জায়গাটি কর্পোরেশনের নাকি অন্য কোনো সংস্থার, সেটাও দেখা হবে এবং প্রয়োজনে তাদের সাথে আলোচনা করা হবে।
গ্রেটার চিটাগাং ইকোনমিক ফোরামের প্রেসিডেন্ট আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী জানান, সরকার দ্রুত জায়গা বুঝিয়ে দিলে চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে মনোরেল নির্মাণ সম্পন্ন করা সম্ভব।
কনসোর্টিয়ামের প্রধান প্রতিনিধি কাউসার আলম চৌধুরী আশা প্রকাশ করেন, সাত-আট মাসের মধ্যে ফিল্ড সার্ভের রিপোর্ট জমা দিতে পারবেন। তিনি জানান, সার্ভের মাধ্যমে ডিপো এলাকার জন্য দরকারি কমপক্ষে ২০ হেক্টর বা ৫০ একর জমি কোথায় পাওয়া যাবে, তা খুঁজে বের করাই এখন তাদের প্রধান লক্ষ্য।
কনসোর্টিয়াম সূত্র অনুযায়ী, মনোরেলের সম্ভাব্য তিনটি রুট থাকবে, যার মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৫৪ কিলোমিটার:
লাইন-১ (সাড়ে ২৬ কিমি): কালুরঘাট থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত (বহদ্দারহাট, চকবাজার, লালখান বাজার, দেওয়ানহাট ও পতেঙ্গা হয়ে)।
লাইন-২ (সাড়ে ১৩ কিমি): সিটি গেট থেকে শহীদ বশিরুজ্জামান স্কয়ার পর্যন্ত (এ কে খান, নিমতলী, সদরঘাট ও ফিরিঙ্গি বাজার হয়ে)।
লাইন-৩ (সাড়ে ১৪ কিমি): অক্সিজেন থেকে ফিরিঙ্গি বাজার পর্যন্ত (মুরাদপুর, পাঁচলাইশ, আন্দরকিল্লা ও কোতোয়ালী হয়ে)।
প্রকল্পটির সম্ভাব্য ব্যয় ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা হতে পারে বলে জানানো হয়েছে। এই মনোরেল নির্মাণ সম্পন্ন হলে প্রতি ঘণ্টায় কয়েক হাজার মানুষকে নিরাপদে পরিবহনে সক্ষম হবে, যা নগরীর যানজট কমাতে ও ভ্রমণের সময় অর্ধেকেরও বেশি কমিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।