চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে যখন প্রার্থীরা নানা ধরনের আকর্ষণীয় প্রচারপত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে ছুটছেন, তখন এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নজর কেড়েছে সবার। শামসুন নাহার হল সংসদের ভিপি প্রার্থী শেখ সাদিয়া সিদ্দিকা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে নিজের চুলের খোঁপার কাটা ব্যবহার করে ব্রেইল পদ্ধতিতে প্রচারপত্র তৈরি করেছেন।
পদার্থবিদ্যা বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ছাত্রী সাদিয়া (২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ) মনে করেন, সাড়ে তিন দশক পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই নির্বাচনকে ঘিরে ক্যাম্পাসে যে বিপুল উৎসাহ ও প্রচারণার আমেজ সৃষ্টি হয়েছে, দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীরা যেন তা থেকে বঞ্চিত না হন।
সাদিয়া বলেন, “আমার হলেই পাঁচ-ছয় জন শিক্ষার্থী আছেন, যারা চোখে দেখতে পান না। সবাই যখন প্রচারপত্র দিচ্ছে, আমিও একই ধরনের সাধারণ কাগজ দিলে তাদের কাছে আমার পরিচয় বা ব্যালেট নম্বর মুখে বলে আসতে হচ্ছে। এমন কোনো চিহ্ন থাকে না যে তারা পরবর্তীতে আমাকে মনে রাখতে পারবেন।” এই চিন্তা থেকেই তিনি দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রেইল পদ্ধতির প্রচারপত্র তৈরির পরিকল্পনা করেন।
ব্রেইল পদ্ধতির প্রচারপত্র ছাপানোর জন্য ঢাকা বা চট্টগ্রামে কোনো প্রিন্টিং হাউস খুঁজে না পাওয়ায় এবং আর্থিক দিক বিবেচনা করে সাদিয়া নিজেই উদ্যোগটি নেন। তিনি ইউটিউব ও বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ব্রেইল কনভার্ট পদ্ধতি দেখে নেন। এরপর তার মেটালিক খোঁপার কাটা ব্যবহার করে কাগজে এমনভাবে চিহ্ন তৈরি করেন, যা আঙ্গুল দিয়ে স্পর্শ করে পড়া যায়।
বাদামী রঙের এই প্রচারপত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের মানচিত্রের ছবি রয়েছে এবং তার ব্যালেট নম্বর ব্রেইল পদ্ধতিতে লেখা।
সাদিয়া নিজের হাতে তৈরি ব্রেইল লিফলেট হলের একজন দৃষ্টিহীন ছাত্রীর কাছে নিয়ে যান। ছাত্রীটি স্পর্শ করেই জানিয়ে দেন যে সেখানে ৩ লেখা আছে। শামসুন নাহার হল সংসদ নির্বাচনে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সাদিয়ার ব্যালেট নম্বরও ৩।
আগামী ১৫ অক্টোবর চবিতে চাকসু, ১৪টি হল এবং একটি হোস্টেল সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এতে মোট ৯০৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, যার মধ্যে হল সংসদের প্রার্থী ৪১৫ জন। শামসুন নাহার হল সংসদের ভিপি পদে প্রার্থী হয়েছেন তিনজন।
নির্বাচন কমিশন ব্রেইল পদ্ধতি নিয়ে চিন্তা করলেও তা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন জানান, তারা ব্যালটে ব্রেইল পদ্ধতি রাখার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হচ্ছে না। এর আগে তিনি জানিয়েছিলেন, দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার মতো করে তাদের সঙ্গে একজন উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীকে সহযোগী হিসেবে নিয়ে ভোট দিতে পারবেন।
সাদিয়া আশা করছেন, পূজা শেষে অন্যান্য ছাত্রীরা হলে ফিরলে তিনি সকলের কাছে এই ব্যতিক্রমী প্রচারপত্র পৌঁছে দিতে পারবেন।