বৃটেনের সাবেক ট্রেজারি মন্ত্রী এবং লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিক সম্প্রতি একটি দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে তিনি ‘বলির পাঁঠা’ হয়েছেন। দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই মন্তব্য করেন।
মামলার অভিযোগ ও টিউলিপের প্রতিক্রিয়া
টিউলিপ সিদ্দিক, যিনি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে তিনি মায়ের, ভাইয়ের ও বোনের জন্য ঢাকার পূর্বাচলে একটি জমি নিশ্চিত করতে প্রভাব খাটিয়েছেন। টিউলিপ এই অভিযোগকে ‘সম্পূর্ণ হাস্যকর’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তার ও আরও ২০ জনের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হওয়ার কথা থাকলেও, তিনি ব্যক্তিগতভাবে বা ভিডিও কনফারেন্সে উপস্থিত থাকবেন কি না, সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি।
তিনি দাবি করেন, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর থেকেই তার জীবনে বাংলাদেশের ‘কদর্য রাজনীতি’ প্রভাব ফেলতে শুরু করে। অচেনা ওয়েবসাইটে খবর ছড়াতে থাকে যে, তিনি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৫০০ কোটি ডলার আত্মসাৎ করেছেন।
২০১৩ সালে মস্কোতে শেখ হাসিনা ও ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার একটি ছবি প্রকাশিত হয়, যা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। টিউলিপ বলেন, তিনি কেবল বেড়াতে গিয়েছিলেন এবং একটি আনুষ্ঠানিক দাওয়াতে পুতিনের সঙ্গে তার দুই মিনিটের জন্য দেখা হয়েছিল।
২০০৪ সালে লন্ডনে এক ব্যবসায়ী তাকে বিনামূল্যে একটি ফ্ল্যাট দিয়েছিলেন, যার সঙ্গে শেখ হাসিনার দলের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। টিউলিপ এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ওই ব্যবসায়ী রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় নন।
বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের অভিযোগের পর টিউলিপ সিদ্দিক নিজেই মন্ত্রীদের নৈতিক মানদণ্ডবিষয়ক স্বাধীন উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাসের কাছে নিজেকে উপস্থাপন করেন। দুই সপ্তাহের গভীর তদন্ত শেষে ম্যাগনাস তাকে কোড লঙ্ঘনের অভিযোগ থেকে মুক্তি দেন। তবে তিনি বলেন, পারিবারিক সম্পর্কের কারণে সৃষ্ট সুনামের ঝুঁকি সম্পর্কে আরও সচেতন না থাকাটা দুর্ভাগ্যজনক।
টিউলিপ বলেন, তিনি জন্মসূত্রে কার ভাগনি, তা তার হাতে নেই। তিনি আরও বলেন, তিনি তার খালার পক্ষে সাফাই গাইতে আসেননি। তিনি চান, বাংলাদেশের জনগণ যেন প্রয়োজনীয় ন্যায়বিচার পায়।
উল্লেখ্য, টিউলিপ সিদ্দিক গত বছর জুলাই মাসে লেবার পার্টি ক্ষমতায় আসার পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে অর্থনৈতিক সচিব ও সিটি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন। কিন্তু এই সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি দ্রুত বদলাতে থাকে এবং গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসন ক্ষমতা ভেঙে পড়ে।