পেকুয়া প্রতিনিধি: জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং পরিবেশগত বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে যেখানে রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক মহল নানামুখী উদ্যোগ নিচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে স্থানীয় পর্যায়ে এক ব্যতিক্রমী উদাহরণ সৃষ্টি করেছে পেকুয়া উপজেলা সমাজ কল্যাণ পরিষদ। একটি অরাজনৈতিক, সেবামূলক ও সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে সংগঠনটি গ্রহণ করেছে ”বৃক্ষরোপণ অভিযান ২০২৫”, যা ইতোমধ্যেই স্থানীয় পর্যায়ে প্রশংসিত হয়েছে।
রবিবার (১৩ জুলাই) দুপুর ১২টায় কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী এয়ার আলী খান আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় এবং রাজাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বৃক্ষরোপণের তৃতীয় ধাপ অনুষ্ঠিত হয়।
বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ, বনজ ও ভেষজ গাছ এই কর্মসূচির আওতায় রোপণ করা হয়।
উল্লেখ্য, পেকুয়ার সাতটি ইউনিয়নে ধারাবাহিকভাবে এ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। এর আগে উজানটিয়া ও মগনামা ইউনিয়নে অভিযান সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
এই কর্মসূচি এগিয়ে যাচ্ছে এক অনুপ্রেরণাদায়ী প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে “একটি হলেও বৃক্ষরোপণ করব মনে মনে, সবুজ দেশের সুষ্ক বাতাস লাগুক সবার প্রাণে”। এটি শুধু একটি স্লোগান নয়, বরং একটি চিন্তা-পদ্ধতি—যার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে পরিবেশ সংরক্ষণে উদ্বুদ্ধ করার প্রয়াস চালানো হচ্ছে।
বৃক্ষরোপণ শেষে রাজাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে পরিবেশ সচেতনতা বিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। বক্তারা গাছের উপকারিতা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং উপকূলীয় অঞ্চলে গাছের ভূমিকা নিয়ে বক্তব্য রাখেন।
এক বক্তা বলেন, “উপকূলীয় অঞ্চলে গাছ মানে শুধু অক্সিজেন নয়, গাছ মানে বাঁচার অবলম্বন। গাছ আমাদের দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে, ভূমি ক্ষয় রোধ করে, বেঁচে থাকার আশ্রয় দেয়।”
এ সময় উপস্থিত ছিলেন রাজাখালী এয়ার আলী খান আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবু জাফর, প্রধান শিক্ষক মো. জাহেদ উল্লাহ, সহকারী প্রধান শিক্ষক জিয়াবুল করিম, রাজাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্বাস উদ্দিন আজাদ, সহকারী শিক্ষক বদরুল আলম, পেকুয়া উপজেলা সমাজ কল্যাণ পরিষদের আজীবন সদস্য সাইফুল ইসলাম, ইসমাইল খান, আরমান বিন কাশেম, নাইমুল আবেদীন, মো. আরকান প্রমুখ।
পেকুয়া উপজেলার মতো উপকূলীয় এলাকায় বৃক্ষরোপণ কার্যক্রমের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস এবং নদীভাঙনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য গাছ একটি প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে। পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং জলবায়ু ভারসাম্য বজায় রাখতে এটি এক অনন্য উদ্যোগ।
এই সংগঠনটি শুধুমাত্র বৃক্ষরোপণ নয়, বরং সামাজিক উন্নয়ন, দুর্যোগ সহায়তা, স্বাস্থ্য সচেতনতা ও শিক্ষা খাতে বিভিন্ন সময় সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। তাদের কার্যক্রম স্থানীয় প্রশাসন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ জনগণের কাছে ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দিয়েছে।
স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা এই ধরনের উদ্যোগ শুধু পেকুয়া নয়, বরং বাংলাদেশের অন্যান্য উপকূলীয় এলাকাতেও অনুকরণীয় হতে পারে। সরকার, স্থানীয় প্রশাসন ও সামাজিক সংগঠনগুলোর সম্মিলিত প্রয়াসে দেশব্যাপী একটি সবুজ ও সহনশীল পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব।
পেকুয়া উপজেলা সমাজ কল্যাণ পরিষদের বৃক্ষরোপণ অভিযান ২০২৫ তারই একটি ছোট অথচ প্রভাবশালী পদক্ষেপ।