নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধিঃ বান্দরবান সীমান্তসংলগ্ন মিয়ানমারের অভ্যন্তরে আরাকান আর্মি (এএ), আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও)—এই তিন সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে নতুন করে সংঘর্ষের ঘটনায় সীমান্তবর্তী এলাকায় চরম উত্তেজনা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
শনিবার (৪ অক্টোবর) রাত আটটার দিকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু চাকমাপাড়া সীমান্তের ওপারে, আন্তর্জাতিক সীমারেখার ৩৪ নম্বর পিলার থেকে প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ মিটার ভেতরে তীব্র গোলাগুলি শুরু হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা মনির আহমেদ জানান, "রাতের দিকে হঠাৎ করেই প্রচণ্ড শব্দে গুলি শুরু হয়। প্রথমে মনে হয়েছিল আতশবাজি ফাটানো হচ্ছে, পরে বুঝি আসলে গোলাগুলির শব্দ। থেমে থেমে গুলি চলেছে পুরো রাতজুড়ে।" এই সময় আতঙ্কে সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা ঘরের ভেতর অবস্থান নেন এবং অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে অন্যত্র চলে যান।
এর আগে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে মিয়ানমারের লংপংপাড়া এলাকায় আরাকান আর্মি ও আরসার মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়, যা ধীরে ধীরে আলীকদম উপজেলার সীমান্তসংলগ্ন এলাকাতেও প্রভাব ফেলে।
বিজিবি সূত্র অনুযায়ী, সংঘর্ষটি রামু ব্যাটালিয়নের দায়িত্বাধীন সীমান্ত পিলার ৫৫ ও ৫৬-এর মধ্যবর্তী স্থানে এবং বুচিটং সীমান্ত চৌকির ওপারে ঘটছে।
রামু ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, "পোয়ামুহুরী ও বুচিটং সীমান্ত চৌকির দায়িত্বপূর্ণ এলাকার শূন্যরেখার ওপারে সংঘর্ষ চলছে। পরিস্থিতি আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।"
একইসঙ্গে, কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন (৩৪ বিজিবি)-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম খায়রুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, "মিয়ানমারের অভ্যন্তরে আরাকান আর্মি, আরসা ও আরএসও’র মধ্যে সংঘর্ষের খবর নিশ্চিতভাবে পেয়েছি। আমাদের সীমান্তের ভেতরে সংঘর্ষ হয়নি, তবে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।"
এছাড়া বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার ওপারের কুরিকপাতা ইউনিয়নের দুর্গম এলাকাতেও একই ধরনের গোলাগুলির খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয় ম্রো জনগোষ্ঠীর সদস্যরা জানান, গত এক মাসে অন্তত চারবার এমন গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।
সীমান্তসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আন্তর্জাতিক সীমান্ত পিলার ৩৪ থেকে ৫৭ পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকা দীর্ঘদিন ধরে গরু ও মাদক পাচারের রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ওই রুটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে প্রতিযোগিতাই এই সংঘর্ষের মূল কারণ।
বর্তমানে নাইক্ষ্যংছড়ি, আলীকদম, থানচি ও রুমা সীমান্তে বিজিবি’র সেক্টর ও ব্যাটালিয়ন সদস্যরা মোতায়েন রয়েছেন এবং টহল কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে।
রামু ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক আরও বলেন, "এটি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয় হলেও সীমান্তসংলগ্ন হওয়ার কারণে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছি।"