কক্সবাজারের রামুতে এবারের প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসবে এক অসাধারণ ও মানবিক বার্তা আকাশে উড়ল—"ফিলিস্তিন হোক মুক্ত"। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের শান্তি ও আত্মশুদ্ধির এই উৎসবে ফানুসে লেখা এই বার্তাটি উপস্থিত হাজারো মানুষের হৃদয়ে শান্তির এক অন্যরকম আবেগ সৃষ্টি করেছে।
আজ থেকে এক দশক আগে, ২০১২ সালে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় রামুর বৌদ্ধ মন্দিরগুলো জ্বলে উঠেছিল। সেই ভয়াবহ রাতের পর মানুষে মানুষে সহাবস্থানের বিশ্বাস টলে গিয়েছিল। এক দশক পর আজ সেই একই রামুতে শান্তির প্রতীক হিসেবে প্রবারণা পূর্ণিমার ফানুসে লেখা হলো শান্তি, সহমর্মিতা ও বিশ্ব মানবতার বার্তা।
সোমবার (৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সীমা বিহার প্রাঙ্গণে হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ফানুস উড়ানোর সময় আকাশজুড়ে ভেসে ওঠে এই বার্তা, যা প্রবারণার মূল চেতনার সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।
রামু সীমা বিহারের অধ্যক্ষ প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু জানান, আষাঢ় পূর্ণিমা থেকে আশ্বিন পূর্ণিমা পর্যন্ত তিন মাসের বর্ষাবাস শেষে ভিক্ষুরা এই দিনে আত্মসমালোচনা ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে নতুন প্রতিজ্ঞায় ব্রতী হন। বৌদ্ধ ধর্মে এটি 'সংযম ও পরিশুদ্ধতার উৎসব' হিসেবে পরিচিত।
বৌদ্ধ বিশ্বাস অনুযায়ী, ফানুসের আলো অন্ধকার দূর করে শান্তি, কল্যাণ ও আলোকিত জীবনের প্রতীক। তাই এই রাতে সবাই একসাথে ফানুস উড়িয়ে নিজের ও বিশ্বের মঙ্গল কামনা করেন।
রামুর স্থানীয় সাংবাদিক সুনীল বড়ুয়া বলেন, "প্রবারণা মানে শান্তি, সহমর্মিতা ও মানবতার জয়গান। আমরা চাই, পৃথিবীর সব যুদ্ধ, নিপীড়ন ও অন্যায়ের অবসান হোক। ফানুসে লেখা 'ফিলিস্তিন হোক মুক্ত' সেই মানবতার বার্তাই বহন করছে।"
তরুণ এক্টিভিস্ট ইনজামাম উল হক এই বার্তাটিকে প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে দেখেন। তিনি বলেন, "আমরা ফিলিস্তিনের মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর মানবিক আহ্বান জানিয়েছি। এই আলো যেন অন্ধকারে থাকা মানুষের জন্য আশার প্রতীক হয়।"
স্থানীয় যুবক অর্পণ বড়ুয়ার কণ্ঠেও একই সুর: "যেখানে ঘৃণা, সেখানে আলো জ্বালানোই বৌদ্ধ ধর্মের মূল বার্তা। প্রবারণার ফানুস সেই বার্তাই আকাশে ছড়িয়ে দেয়।"
প্রবারণা উৎসবকে কেন্দ্র করে কক্সবাজার শহরের অগগমেধা ক্যায়াংসহ জেলার প্রায় সব বৌদ্ধ বিহারেই প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, প্রার্থনা ও ফানুস উড়ানোর জমকালো আয়োজন চলছে।
উৎসব ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। ভিড় নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তায় পুলিশ, র্যাব ও আনসারের যৌথ টহল দেখা যায়।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন, "উৎসবের আবহে যেন কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না থাকে, তাই জেলা জুড়ে বাড়ানো হয়েছে টহল ও নজরদারি। এখন পর্যন্ত সব কিছু শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হচ্ছে।"
ধর্মীয় শান্তি, মানবতার বার্তা আর ফানুসে লেখা মানবিক আহ্বান—সব মিলিয়ে এবারের প্রবারণা পূর্ণিমা কক্সবাজার জুড়ে পরিণত হয়েছে শান্তি ও সহমর্মিতার প্রতীক এক অনন্য উৎসবে।