কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে বিট কর্মকর্তা ও রেঞ্জারের সহযোগিতায় প্রায় ৩০ হাজার আকাশমনি গাছ কেটে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের আওতাধীন এই সামাজিক বনায়নের গাছগুলো কেটে ফেলায় পুরো এলাকা গাছশূন্য হয়ে পড়েছে, যা পরিবেশ ও প্রতিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করেছে।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগ বারবাকিয়া রেঞ্জের টৈটং বিটের ৮০ হেক্টর সংরক্ষিত বনভূমিতে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার আকাশমনি গাছের চারা রোপণ করে। এই বনায়নকে সফল করার জন্য ২০০ জনকে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীরা দীর্ঘ আট বছর ধরে নিজেদের প্রচেষ্টায় এসব গাছ বড় করে তুলেছেন। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে বাগানটি এখন বিক্রয়যোগ্য হয়েছে, আর ঠিক তখনই একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে এই বনাঞ্চলের দিকে।
অভিযোগ উঠেছে, বনবিভাগের কতিপয় অসাধু কর্মচারী ও কর্মকর্তার যোগসাজশে এই গাছগুলো অবাধে কেটে বিক্রি করা হচ্ছে।
জানা গেছে, একটি স্থানীয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেট অস্ত্রধারী ডাকু প্রকৃতির লোক নিয়োগ করেছে যারা গাছ কাটা থেকে শুরু করে গাড়ি ভর্তি করে গন্তব্যে পৌঁছানো পর্যন্ত সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করে। বনবিভাগের কর্মকর্তারা এই বিষয়ে অবগত থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। উল্টো, যারা প্রতিবাদ বা লেখালেখি করছেন, তাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। গত এক মাস ধরে বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা ও টৈটং বিট কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বনখেকোরা সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীদের এই গাছগুলো কেটে নিয়ে যাচ্ছে। ট্রলি গাড়ি, ডাম্পার ও পিকআপের মতো বিভিন্ন যানবাহনে করে এসব গাছ টৈটং ডালারমুখ এবং চকরিয়ার হারবাং রাস্তা দিয়ে প্রতিনিয়ত পাচার করা হচ্ছে।
পেকুয়ার টৈটং ইউনিয়নের সংগ্রামের জুমের ওপরের যোগীর ছাড়া, দুইছড়ি, তকতার ছড়া, নাপিতার ছড়া, ডেনার ছড়া, ও বদির জিরি ৮০ হেক্টর বাগানের অন্তত ৩০ হাজার গাছ এরই মধ্যে কর্তন করে বিক্রি করে দিয়েছে এই প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। এখনও প্রতি রাতে গাছ কাটা অব্যাহত রয়েছে। ঘটনাস্থলে গাছের গোড়ায় তাকালে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, গাছগুলো মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে কাটা হয়েছে। বনবিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে ‘চুক্তি’ করে কোনো বাধা-বিপত্তি ছাড়াই এই গাছগুলো কাটা হচ্ছে। যেভাবে গাছ কাটা হচ্ছে, তাতে জরুরি পদক্ষেপ না নিলে আগামী এক মাসের মধ্যে এই বাগান সম্পূর্ণ উজাড় হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাগানের উপকারভোগী কয়েকজন ব্যক্তি জানান, বনবিভাগ ২০১৭ সালে তাদের যে জায়গা বরাদ্দ দিয়েছিল, তারা তা সঠিকভাবে দেখাশোনা করেছেন। অনেক স্থানে তারা নিজেদের টাকা দিয়ে গাছের চারা রোপণ করেছেন এবং প্রতি মাসে টাকা দিয়ে প্রহরী নিয়োগ করেছেন। ৮০ হেক্টর বনের এই প্রকল্পে ২০০ জন অংশীদার (সামাজিক বনায়নের উপকারভোগী) রয়েছেন। বিট অফিসের মাধ্যমে জনপ্রতি ১০ হাজার টাকা করে তিনজন পাহারাদারও নিয়োগ করা হয়েছিল, কিন্তু অস্ত্রধারী ডাকুরা তাদেরকে বন থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে।
উপকারভোগীরা জানান, এতদিন বাগানটি অক্ষত থাকলেও বর্তমানে গাছ বড় ও বিক্রয় উপযোগী হওয়ায় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি তাদের ক্ষমতা খাটিয়ে গাছগুলো কেটে নিয়ে যাচ্ছে। তারা আরও জানান, প্রায় ৩০ হাজারের মতো গাছ এরই মধ্যে কেটে নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় জনগণ চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের প্রধান বনসংরক্ষক ও আঞ্চলিক বনসংরক্ষকের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তারা দ্রুত এই অবৈধ গাছ কাটা বন্ধ করে পরিবেশ ও বনাঞ্চল রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।