নিজস্ব প্রতিনিধিঃ একসময় ডেঙ্গু জ্বরকে একটি মৌসুমি রোগ হিসেবে বিবেচনা করা হতো, যার প্রকোপ দেখা যেত মূলত বর্ষাকালে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেই চিত্র সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ডেঙ্গু এখন আর শুধু বর্ষাকালের রোগ নয়, এটি সারা বছরই মানুষকে আক্রান্ত করছে।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ব্যাপক। ওই বছর মোট আক্রান্ত হয়েছিল ২০,৫৪৮ জন এবং মারা যায় ৭ জন। যদিও ২০২৫ সালে আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কমেছে, কিন্তু বছরের শুরু থেকেই ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। আগস্টের ২৫ তারিখ পর্যন্ত এই বছর আক্রান্তের সংখ্যা মোট ৫,৩৬৪ জন এবং এখনো কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। এই পরিসংখ্যান প্রমাণ করে যে ডেঙ্গু এখন সারাবছরের রোগ হিসেবে আমাদের দেশে বিদ্যমান।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. সবুক্তগীর মাহমুদ সোহেল বলেন, আগে বর্ষাকালে এডিস মশার প্রজনন হতো, কিন্তু এখন পরিবেশের পরিবর্তন এবং মানবসৃষ্ট কিছু কারণে সারা বছরই এই মশা বংশবৃদ্ধি করছে। তিনি জানান, আগে শুধু সকাল ও সন্ধ্যায় এডিস মশা কামড় দিত, কিন্তু এখন এটি সবসময় কামড়ায়, যা ডেঙ্গু সংক্রমণের অন্যতম কারণ।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক এবং সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ শাহজাহান নাজির বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ডেঙ্গু এখন শীতকালেও দেখা যাচ্ছে। ডেঙ্গু এখন আমাদের দেশে এনডেমিক (সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়া) হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু এবং ম্যালেরিয়া উভয়ই করোনা ভাইরাসের চেয়েও মারাত্মক হতে পারে, তাই সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।
সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদুল হক জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ডেঙ্গুর এই বিস্তার হচ্ছে কি না, তা নিয়ে আইইডিসিআর গবেষণা করছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, কক্সবাজারে যারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের বেশিরভাগই রোহিঙ্গা নাগরিক। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ঘনবসতিপূর্ণ পরিবেশ এবং মশার বংশবৃদ্ধির অনুকূল পরিস্থিতি এর অন্যতম কারণ।
বিশেষজ্ঞরা ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন:
* নিজের চারপাশ ও আঙিনা পরিষ্কার রাখুন।
* পানি জমতে পারে এমন পাত্র যেমন – ফুলের টব, টায়ার, ডাবের খোসা ইত্যাদি নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
* দিনে ও রাতে সবসময় মশারি ব্যবহার করুন, বিশেষ করে শিশুদের জন্য।
* প্রয়োজনে মশা প্রতিরোধক ক্রিম ব্যবহার করুন।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ডা. সবুক্তগীর মাহমুদ সোহেল বলেন, জ্বর হলেই যেন সিবিসি (কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট) পরীক্ষা করানো হয়। ডেঙ্গু হলে অনেকে না বুঝে অ্যান্টিবায়োটিক বা ব্যথানাশক ঔষধ সেবন করেন, যা প্লাটিলেট কমিয়ে দিয়ে রোগীর জীবন বিপন্ন করতে পারে। তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু হলে পর্যাপ্ত পানি ও স্যালাইন পান করা এবং ডাক্তারের পরামর্শে থাকা জরুরি।
সিভিল সার্জন কার্যালয় জানিয়েছে, ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে তারা বছরজুড়ে স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক প্রচার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।