চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে প্রভাষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন লিখিত পরীক্ষায় ‘অনুত্তীর্ণ’ হওয়া শিক্ষার্থীরা। ‘স্বজনপ্রীতিমূলক’ আখ্যা দিয়ে তারা নিয়োগ বাতিলের দাবি জানিয়ে আজ মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ হামেদ রেজা অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ব্যবস্থাপনা কমিটি নিয়মানুযায়ী এ বিষয়ে উদ্যোগ নেবে।
চলতি বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের স্থায়ী ও অস্থায়ী ভিত্তিতে দুজন প্রভাষক নিয়োগের লিখিত ও মৌখিক (ভাইভা) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। মোট ২৯ জন শিক্ষার্থী লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিলেও চবির শিক্ষার্থীরা কেউই উত্তীর্ণ হতে পারেননি বলে প্রশাসন জানিয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় গুরুতর অনিয়ম, পক্ষপাতদুষ্টতা ও স্বজনপ্রীতি লক্ষ্য করার অভিযোগ তুলেছেন।
লিখিত পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষার্থীকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়, যারা উভয়েই নিজ নিজ বিভাগে প্রথম হয়েছিলেন (ঢাবি শিক্ষার্থী অনার্সে ৪-এর মধ্যে ৪ পেয়েছিলেন)।
দুদকে দেওয়া অভিযোগপত্রে চবির ফারসি বিভাগের ১০ জন শিক্ষার্থী স্বাক্ষর করেছেন। তাদের মূল অভিযোগগুলো হলো:
বিভাগীয় শিক্ষককে বাদ দেওয়া: ফারসি বিভাগের সিনিয়র অধ্যাপক থাকা সত্ত্বেও বিভাগের কোনো শিক্ষককে নিয়োগ বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি এবং তাদের সহযোগিতা চাওয়া হয়নি।
প্ল্যানিং কমিটির অনুমোদন ব্যতিরেকে নিয়োগ: বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটির অনুমোদন ছাড়াই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন: নিয়োগ বোর্ডে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের একজন শিক্ষককে বিশেষজ্ঞ হিসেবে রাখা হয়েছে, যিনি ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে বিএ ও এমএ ডিগ্রিধারী নন।
পরীক্ষা হলের অনিয়ম: লিখিত পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নকারীরা পরীক্ষার হলে উপস্থিত থেকে প্রার্থীদের উত্তরপত্র দেখছিলেন এবং প্রশ্ন বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন, যা সম্পূর্ণরূপে নিয়মবহির্ভূত।
যোগ্য প্রার্থীকে বাদ দেওয়ার অভিযোগ: বিভাগের প্রথমসহ যোগ্য প্রার্থীদের ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দিয়ে অযোগ্যদের ভাইভার জন্য মনোনীত করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা অবিলম্বে এই প্রহসনমূলক নিয়োগ বোর্ড কর্তৃক দেওয়া সিলেকশন প্রত্যাহার করে বিভাগের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের অন্তর্ভুক্ত করে নতুন নিয়োগ বোর্ড গঠনের দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “নিয়োগ পরীক্ষায় কোনো অনিয়ম বা স্বজনপ্রীতি হয়নি। ভাইভা বোর্ড যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে গঠিত হয়েছে। লিখিত পরীক্ষায় পাস না করলেই অনেকে মনে করেন দুর্নীতি হয়েছে। আসলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে এ পর্যন্ত কোনো দুর্নীতি হয়নি।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শামিম উদ্দিন খান বলেন, “আমাদের পরীক্ষায় কোনো নাম থাকে না, একটা কোড নম্বর থাকে। ফলে স্বজনপ্রীতি হওয়ার সুযোগ নেই। যাদের সুপারিশ করা হয়েছে, তারা উচ্চ মান সম্পন্ন। একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোর আউট অব ফোর পাওয়া শিক্ষার্থী, অপরজন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হলে তো ভাইভায় কাউকে ডাকার সুযোগ নাই।
” তিনি আরও বলেন, বোর্ডে থাকা উভয় বিশেষজ্ঞই স্বনামধন্য এবং সিন্ডিকেট তাদের বিবেচনা করেই মনোনীত করেছে।
এদিকে, উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইয়াহইয়া আখতার এই বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।