আপনি কি প্রায়ই খাবার খাওয়ার পর হঠাৎ করে তন্দ্রাচ্ছন্নতা, অস্বস্তিকর পেট ভারী লাগা, বা ঘুমের তীব্র প্রয়োজন অনুভব করেন? যদিও মানসিক চাপ, ঘুম এবং জীবনযাপনের ধরন এতে ভূমিকা রাখে, তবুও আপনার দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসও এক্ষেত্রে দায়ী হতে পারে।
আমাদের খাদ্যতালিকায় কিছু দৈনন্দিন খাবার নীরবে হজমে অস্বস্তি, পানি ধরে রাখা অথবা রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দিতে পারে, যার সবই পেট ফাঁপা এবং ক্লান্তির কারণ হতে পারে। এই সমস্যা এড়াতে হলে যে খাবারগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত, তা নিচে
আলোচনা করা হলো:
১. ফাস্ট ফুড, সাদা রুটি এবং পেস্ট্রি
ফাস্ট ফুড, সাদা রুটি, পেস্ট্রি ইত্যাদিতে থাকা দ্রুত শক্তি রক্তে শর্করার মাত্রা খুব দ্রুত বৃদ্ধি করে। শরীর তখন ইনসুলিন বিস্ফোরণের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করে, যার ফলে শক্তি দ্রুত কমে গিয়ে (Energy Crash) আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ি। এই খাবারগুলোর বেশিরভাগেই থাকে অত্যধিক সোডিয়াম, যা শরীরে পানি ধরে রাখে এবং পেট ফাঁপার কারণ হতে পারে।
২. সোডা বা ঝলমলে পানি (Carbonated Drinks)
সোডা বা ঝলমলে পানি সতেজ স্বাদ দিলেও এর কার্বনেশন আমাদের পরিপাকতন্ত্রে অতিরিক্ত বাতাস প্রবেশ করায়। এই অতিরিক্ত গ্যাস পেট ফাঁপা, অস্বস্তি এবং ঢেকুরের কারণ হতে পারে। এছাড়াও, অনেক কোমল পানীয়তে থাকা অতিরিক্ত চিনি বা কৃত্রিম মিষ্টি উভয়ই ক্লান্তি সৃষ্টি করে।
৩. দুগ্ধজাত পণ্য (দুধ, পনির, আইসক্রিম)
দুধ, পনির এবং আইসক্রিম অনেকেরই প্রিয় হলেও, যাদের সামান্য ল্যাকটোজ ইন্টলারেন্স রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এগুলো খাওয়ার পরে পেট ফাঁপা, খিঁচুনি বা ক্লান্তি সৃষ্টি হতে পারে। হজম না হওয়া ল্যাকটোজ অন্ত্রে গাঁজন করে গ্যাস তৈরি করে। এমনকি ল্যাকটোজ ইন্টলারেন্স না থাকলেও, চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত পণ্য হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয় এবং ক্লান্তি সৃষ্টি করে।
৪. ক্রুসিফেরাস সবজি (যেমন: ব্রোকলি, ফুলকপি)
ব্রোকলি, ফুলকপি, বাঁধাকপি এবং ব্রাসেলস স্প্রাউট পুষ্টিতে পূর্ণ সুপারফুড হলেও, এগুলিতে র্যাফিনোজ নামক একটি জটিল চিনি থাকে। এই চিনি অন্ত্রের হজমে সমস্যা করে। র্যাফিনোজের এই গাঁজন প্রক্রিয়া গ্যাস তৈরি করে, যা পেট ফাঁপা তৈরি করতে পারে। কাঁচা খেলে এগুলো প্রভাব আরও বাড়িয়ে তোলে।
৫. কৃত্রিম মিষ্টিযুক্ত ডায়েট ফুড (Diet Food)
ডায়েট সোডা এবং কম ক্যালোরিযুক্ত খাবার সাধারণত সরবিটল, জাইলিটল বা অ্যাসপার্টাম দিয়ে তৈরি করা হয়। এই মিষ্টিগুলো অন্ত্রে খারাপভাবে হজম হতে পারে, যার ফলে গাঁজন, গ্যাস উৎপাদন এবং পেট ফুলে যেতে পারে। এগুলো অন্ত্রের মাইক্রোবায়োটার ভারসাম্য নষ্ট করে, যার ফলে শক্তি এবং হজমের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।