ঢাকাশুক্রবার , ৩ অক্টোবর ২০২৫
  1. অন্যান্য
  2. অর্থনীতি
  3. আইন ও বিচার
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আবহাওয়া
  6. ইসলাম ও ধর্ম
  7. কৃষি
  8. ক্যাম্পাস
  9. ক্রিকেট
  10. খেলাধুলা
  11. চাকরি
  12. জাতীয়
  13. তথ্য প্রযুক্তি
  14. দেশজুড়ে
  15. নগর-মহানগর
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ঐক্যের প্রতীক, প্রথাবিরোধী কণ্ঠ

কিংবদন্তি গায়ক জুবিন গার্গের প্রয়াণ

সাম্প্রতিক খবর ডেস্ক
অক্টোবর ৩, ২০২৫ ৫:৪৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের সংগীতে বিশাল শূন্যতা তৈরি করে গত ১৯ সেপ্টেম্বর না ফেরার দেশে চলে গেলেন কিংবদন্তি গায়ক জুবিন গার্গ।

সিঙ্গাপুরের লাজারুস দ্বীপের কাছে স্কুবা ডাইভিংয়ের সময় অসুস্থ হয়ে ৫২ বছর বয়সী এই শিল্পীর আকস্মিক মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুতে গোটা রাজ্যে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

তাঁর স্ত্রী গরিমা সাইকিয়া গার্গ এক বিবৃতিতে জানান, সমুদ্রে সাঁতার কাটার সময় জুবিনের খিঁচুনি শুরু হয় এবং খুব কম সময়ের মধ্যে তিনি মারা যান। জুবিন সিঙ্গাপুরে ‘নর্থইস্ট ইন্ডিয়া ফেস্টিভ্যাল’-এ পারফর্ম করার কথা ছিল।

১৯৭২ সালে আসামের জোরহাট শহরে কবি মোহিনী মোহন বরঠাকুর এবং গায়িকা ইলি বরঠাকুরের ঘরে জন্ম নেওয়া জুবিন মাত্র তিন বছর বয়স থেকে গান গাওয়া শুরু করেন।
পেশাগত সূচনা: ১৯৯২ সালে তাঁর প্রথম অসমীয়া অ্যালবাম ‘অনামিকা’ মুক্তির মাধ্যমে তাঁর পেশাদার কর্মজীবনের সূচনা হয়।
বিশাল রেকর্ড: বর্ণাঢ্য জীবনে তিনি ডজনখানেক ভাষা ও উপভাষায় ৩৮ হাজারের বেশি গান রেকর্ড করেন।
জাতীয় পরিচিতি: ২০০৬ সালে বলিউড সিনেমা ‘গ্যাংস্টার: আ লাভ স্টোরি’র বিখ্যাত গান ‘ইয়া আলী’র মাধ্যমে তিনি জাতীয় স্তরে বিপুল পরিচিতি পান।
জাতীয় পুরস্কার: পরের বছর একটি নন-ফিচার চলচ্চিত্রের জন্য গান কম্পোজ করে তিনি জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেন।

জুবিন গার্গের সংগীত আসামের হিন্দু-মুসলিম ও ভাষাগত বিভাজনের মাঝে এক বিরল ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। বাংলাভাষী মুসলিম, যাদের প্রায়শই ‘বহিরাগত’ বলে আক্রমণ করা হয়, তারাও জুবিনের গানে শান্তি খুঁজে পেতেন। ট্রাকচালক ইমাম হুসেনের মতো ভক্তরা তাঁর গানকে ‘ভেতরের শান্তি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

জুবিনের মৃত্যুর পর এই ঐক্যের চিত্র আরও স্পষ্ট হয়:
* মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা তাঁর গান বাজিয়েছেন।
* মুসলিম নেতারা তাঁর ছবিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে কোরআন তেলাওয়াত করেছেন, যা ইসলামি রীতিতে বিরল।
* তিনি আসামের বাঙালি-মুসলিম সম্প্রদায়ের ভক্তিমূলক লোকসংগীত ‘জিকির’ গেয়ে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন।
* স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আবরার নাদিম বলেন, জুবিনের গান ‘এই মায়ার ধরাত’ তাঁকে আধ্যাত্মিকতার কাছাকাছি এনেছিল।

জুবিন গার্গ বহুবার নিজেকে ‘নাস্তিক’ এবং ‘সামাজিক বামপন্থী’ (social leftist) হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি নিজেকে মূলধারার রাজনৈতিক দল থেকে দূরে রেখেছিলেন এবং ভারতে গভীরভাবে প্রোথিত জাতিভেদ (বর্ণ) প্রথার কট্টর সমালোচক ছিলেন।
বিপ্লবী ঘোষণা: মৃত্যুর পর ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে তিনি বলেন, “আমি কেবল একজন মানুষ। আমার কোনো জাত, ধর্ম বা ঈশ্বর নেই। আমি কাঞ্চনজঙ্ঘা।”
প্রথা ভাঙা: মঞ্চে অশ্লীল শব্দ ব্যবহার, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গান গাওয়া এবং প্রতিষ্ঠিত সামাজিক নিয়মের প্রতি স্পষ্ট বিরোধিতা দেখিয়ে তিনি আসামের সাংস্কৃতিক জগতে এক ‘আইকনোক্লাস্ট’ (প্রথাবিরোধী) হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন।
রাজনৈতিক অবস্থান: তিনি ২০১৯ সালে বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন।

জুবিন গার্গের প্রয়াণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা শোক প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, “সংগীতে তাঁর সমৃদ্ধ অবদানের জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।”

গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অখিল রঞ্জন দত্ত মনে করেন, প্রকাশ্যে বিজেপি সরকারের নীতির সমালোচনা করলেও ব্যক্তিগতভাবে নেতাদের আক্রমণ না করায়, বিজেপির পক্ষে তাঁর উত্তরাধিকারকে গ্রহণ করা সহজ হয়েছে।

জুবিন গার্গ বাংলাভাষী মুসলিমদের কখনো খারাপভাবে চিত্রিত করেননি। তাঁর এই অসাম্প্রদায়িক অবস্থান তাঁকে এমন একজন শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে, যিনি ঘৃণার রাজনীতি প্রত্যাখ্যান এবং সবাইকে সমানভাবে গ্রহণ করেছেন।

জুবিন গার্গের আকস্মিক মৃত্যুতে আসাম সরকার চার দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে। ২১ সেপ্টেম্বর গুয়াহাটি বিমানবন্দরে তাঁর মরদেহ পৌঁছানোর পর লাখ লাখ ভক্ত স্টেডিয়াম পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ শোক মিছিলে অংশ নেন। ২৩ সেপ্টেম্বর পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় এবং ২১ বার গান স্যালুটে তাঁকে দাহ করা হয়। এই দৃশ্য রাজ্যের ধর্মীয় ও ভাষাগত বিভাজনের মাঝে এক বিরল ঐক্যের মুহূর্ত তৈরি করে।

ট্রাকচালক হুসেনের কাছে জুবিনের সংগীতে হিন্দু-মুসলিম, অসমীয়া-বাঙালিনির্বিশেষে সবার জন্য আসাম—এই ধারণা নিয়ে কোনো বিভ্রম ছিল না।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।