কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীনের আকস্মিক মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন আধুনিক গানের প্রখ্যাত শিল্পী কনকচাঁপা। প্রয়াত শিল্পীকে শেষবার দেখতে রাতেই হাসপাতালে ছুটে যান তিনি। সেখানে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ফরিদা পারভীনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন।
একইসঙ্গে, তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিল্পীদের নিয়ে করা নেতিবাচক মন্তব্যকারীদের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তার মতে, ফেসবুক এখন এমন মানুষের মন্তব্যে ভরে গেছে যারা শিল্পীদের পাপ-পুণ্য নিয়ে অযাচিত বিচার করে।
লালনগীতির আধুনিকায়নে ফরিদা পারভীনের ভূমিকা
কনকচাঁপা বলেন, ফরিদা পারভীন লালনগীতির যে জনপ্রিয়তা তৈরি করে গেছেন, সেই স্থানটি এখন শূন্য। তিনি উল্লেখ করেন, “আমরা যারা আধুনিক সমাজে লালনের গান শুনতাম, একমাত্র ফরিদা আপাকেই শুনতাম।” তিনি আরও বলেন যে, ফরিদা পারভীন লালন সাঁইজির আখড়া থেকে গানকে তুলে এনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় সবার কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। তার কণ্ঠে এক মায়া ছিল যা যেকোনো গানকে অসাধারণ করে তুলত।
আবেগপ্রবণ হয়ে কনকচাঁপা বলেন, “সত্যি সত্যি আমরা অনেককেই হারিয়ে ফেলছি। সংগীতাঙ্গনে আমাদের মাথার উপর যারা বটবৃক্ষের মতো ছিলেন তাদের প্রায় সবাইকে আমরা হারিয়ে ফেলছি। আমরা খুব অসহায় হয়ে যাচ্ছি।” এ কথা বলার পর তিনি নেটিজেনদের সমালোচনামূলক মন্তব্যের প্রতি তার ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি অনুরোধ করেন যেন তার কথাগুলো কাটা না হয়, কারণ তিনি অপ্রিয় সত্য বলতে চলেছেন।
কনকচাঁপা বলেন, সাধারণ মানুষ সারাজীবন গান ও অভিনয় উপভোগ করে, কিন্তু একজন শিল্পী মারা গেলে তাদের পাপ-পুণ্য, বেহেশত-দোযখ নিয়ে কথা বলা শুরু করে। তিনি বলেন, “একজন শিল্পী মারা যাওয়ার পর তার লাশ দাফন করার আগেই তিনি দোযখের কত নম্বরে যাবেন, সেগুলো নিয়ে কথা বলা শুরু করে মানুষ। সারাজীবন কিন্তু তারাই আমাদের গান শোনেন।”
তিনি আরও বলেন, “শিল্পীরা আমরা শুধু গানই করে যাই, শিল্পীরাই একমাত্র জাতি যাদের কোনো ঘুষ খাওয়ার জায়গা নাই, দুর্নীতি করার জায়গা নাই, মিথ্যাচার করার জায়গা নাই, অন্যায় করার জায়গা নাই।” অথচ তাদের মৃত্যুর পর অনলাইনের মন্তব্যকারীরা দ্রুত তাদের পাপী সাব্যস্ত করে ফেলে।
তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “একদম বেহেশতের টিকিট যেন সবার হাতে! মাওলানা দিয়ে ভর্তি যেন ফেসবুক।”
সবশেষে কনকচাঁপা সবার প্রতি অনুরোধ জানান, শিল্পীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে এবং তাদের সম্মান করতে। তিনি বলেন যে, তিনি আবেগবশত কিছু অপ্রিয় সত্য বলে ফেলেছেন এবং সবার কাছে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টি কামনা করেন।

