দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হলেও শিগগিরই কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ডানা মেলতে চলেছে। সরকারি প্রজ্ঞাপনে ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্বীকৃতি পাওয়ায় পর্যটন, অর্থনীতি ও বৈদেশিক যোগাযোগে নতুন মাত্রা যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের পর এটি দেশের চতুর্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে যুক্ত হলো।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর জন্য শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের দাবি, আন্তর্জাতিক টার্মিনাল ভবনের নিচতলার ‘অ্যারাইভাল’ অংশটি সম্পূর্ণ প্রস্তুত। ইমিগ্রেশন, কাস্টমস, ব্যাংকের কালেকশন বুথ, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় বুথসহ প্রবাসী কল্যাণ ও তথ্যকেন্দ্র স্থাপনের কাজও সম্পন্ন হয়েছে। আধুনিক লাগেজ স্ক্যানার মেশিনও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা বা ফ্লাইট শিডিউল ঘোষণার পর দ্রুতই প্রয়োজনীয় জনবল যুক্ত করা হবে।
কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্টোগ্রাফার মো. আব্দুস সোবহান জানান, প্রবাস কল্যাণ ডেস্ক, হেলথ ডেস্ক এবং ইমিগ্রেশন ডেস্ক মোটামুটি চালু হয়ে গেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফ্লাইট অনুমোদিত হলেই বিমান অবতরণ শুরু হতে পারবে।
প্রাথমিকভাবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কক্সবাজার–ঢাকা–কলকাতা–কক্সবাজার রুটে সপ্তাহে একটি ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনা করছে। পরবর্তীতে যাত্রী চাহিদা অনুযায়ী ফ্লাইট সংখ্যা ধাপে ধাপে বাড়ানো হতে পারে।
বিমানবন্দরের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় রানওয়ের কাজ প্রায় ৮৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। ঝিনুক আকৃতির দৃষ্টিনন্দন টার্মিনাল ভবনের কাজও প্রায় ৮৬ শতাংশ সম্পন্ন। বর্তমান ৯ হাজার ফুট দীর্ঘ রানওয়েটি সাগরের বুকে আরও ১ হাজার ৭০০ ফুট সম্প্রসারণের কাজও প্রায় ৮৪ শতাংশ শেষ হয়েছে। এটিই হতে চলেছে দেশের দীর্ঘতম রানওয়ে।
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের শহর কক্সবাজারে সরাসরি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হলে বিদেশি পর্যটকের আগমন বাড়বে, যার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে পর্যটন শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হলে সামুদ্রিক মাছের মতো পণ্য সরাসরি কক্সবাজার থেকে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
তবে চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী সতর্ক করেছেন যে, কেবল অবকাঠামো নয়, আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছাতে হলে বিদেশ থেকে আসা পর্যটকদের জন্য একটি ‘ওয়েলকামিং’ পরিবেশ তৈরি করা জরুরি। উপযুক্ত সংযোগ ও পরিবেশ তৈরি না করে চালু করলে প্রথম দর্শনেই নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে তিনি মনে করেন।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পে ২ হাজার ১৫ কোটি টাকা, রানওয়ে সম্প্রসারণে ৩ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা এবং টার্মিনাল ভবন নির্মাণে ২৭৭ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে।

