গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছাড়লেও মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যবইয়ে শেখ হাসিনার নাম রেখে দেওয়া হচ্ছে। তবে তাঁর নামের আগে যুক্ত করা হচ্ছে ‘স্বৈরাচার’ ও ‘গণহত্যাকারী’-এর মতো কড়া অভিধা। একইসঙ্গে পাঠ্যক্রমে দিনের ভোট রাতে করা এবং ডামি নির্বাচনসহ আওয়ামী লীগ আমলের বিতর্কিত নির্বাচনের নানা প্রসঙ্গ যুক্ত হচ্ছে।
এর আগে, ২০২১ সালে হাইকোর্টের নির্দেশনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বর্তমানে অষ্টম শ্রেণির সাহিত্য-কণিকা বইয়ে ৬ পৃষ্ঠাজুড়ে পুরো ভাষণ ও সংশ্লিষ্ট তথ্য রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, পাঠ্যবইয়ে একাধিক স্থানে একই ভাষণ ও ইতিহাস নিয়ে ‘অতিকথন’ হয়েছে।
ফলে, কয়েকটি বইয়ে রেখে বাকিগুলো থেকে ভাষণ-সংশ্লিষ্ট অংশ বাদ দেওয়ার পক্ষে তারা। তবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) পরিমার্জন কমিটি এখনও এ বিষয়ে একমত হতে পারেনি।
এনসিটিবি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক রবিউল কবির চৌধুরী বলেন, “এই ধরনের বিষয় যেটাই আসুক, এটার একটা কমিটি আছে তো, সেটার মধ্য দিয়েই করা হবে। চূড়ান্ত প্রক্রিয়ার কাজ করা হচ্ছে।” বই পরিমার্জন শেষে এটি জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটিসহ কয়েকটি কমিটির সম্মতি নিয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন পায়।
এই পরিমার্জন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজম। তিনি মনে করেন, পাঠ্যপুস্তকে রাজনৈতিক ইতিহাস নিরাসক্ত ও শোভন হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, “কোনও কিছুই বাদ দেওয়া যাবে না, পরিমার্জন করা যাবে না, সেটা তো নয়। কারণ, আগে যদি বাড়াবাড়ি হয়ে থাকে সেটা তো একেবারে সাধারণ মাত্রার মধ্যেই নিয়ে আসার প্রয়োজনে কাঁটছাঁট করতে হতে পারে।”
জানা গেছে, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পৌরনীতি ও সুশাসন বইয়ে ‘১৪, ‘১৮ ও ‘২৪-এর নির্বাচনের প্রকৃত তথ্য যুক্ত করা হচ্ছে। শেখ হাসিনার নামের আগে স্বৈরাচার ও গণহত্যাকারী বসার বিষয়ে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজম বলেন, “স্বৈরাচার শব্দ আগেও আমাদের পাঠ্যপুস্তকে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে, অন্য অনেকের ক্ষেত্রে। সুতরাং এখনকার পাঠ্যবইয়ে যদি আগের আগের শাসক সর্ম্পকে যায়, তাহলে আমি এটিকে বড় ব্যত্যয় বা ব্যতিক্রম মনে করবো না।”
নির্মোহভাবে উঠে এলো—এই প্রশ্নের জবাবে ড. আজম মন্তব্য করেন, “নিঃসন্দেহে এই সরকারের চাপ ছিল না অথবা কম ছিল। অন্য দলীয় সরকারগুলোর সময় যে রকম থাকে, সে রকম ছিল না।” তিনি আরও বলেন, “পরিমার্জনের ক্ষেত্রে আমি অনেকদূর পর্যন্ত চেষ্টা দেখেছি, বলবো না যে সন্তোষজনক, কিন্তু খানিকটা অগ্রগতি হয়েছে।”
উল্লেখ্য, নতুন শিক্ষাক্রম স্থগিত করে ২০২৪ সালে অন্তর্বর্তী সরকার ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের আলোকে পাঠ্যবই পরিমার্জন করে। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২৬ সালের জন্যও পাঠ্যপুস্তকে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

