সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি ও ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে কর ফাঁকি ও দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট তার ট্যাক্স ফাইল এবং ব্যাংক হিসাব পরীক্ষা করে দেখছে। এছাড়া, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সরকারি প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগ তদন্ত করছে।
টিউলিপ সিদ্দিক, যিনি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক, দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন। তবে তার ট্যাক্স ফাইল থেকে জানা যায়, তিনি ২০০৬-০৭ অর্থবছর থেকে ২০১৮-১৯ করবর্ষ পর্যন্ত বাংলাদেশের করদাতা হিসেবে রিটার্ন জমা দিয়েছেন। ট্যাক্স ফাইল খোলার সময় তিনি নিজেকে বাংলাদেশের ‘নিবাসী’ হিসেবে উল্লেখ করেন, যা বছরে অন্তত ১৮২ দিন বাংলাদেশে বসবাসের শর্ত পূরণ না করা সত্ত্বেও করা হয়েছে। এক্ষেত্রে তিনি মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, টিউলিপ সিদ্দিক তার ট্যাক্স ফাইলে প্রথমে ধানমন্ডির একটি ঠিকানা এবং পরে গুলশানের একটি ঠিকানা ব্যবহার করেন। তার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বরও রিটার্ন দাখিলের ফরমে উল্লেখ রয়েছে। ২০০৭ সালের ১ জুলাই তিনি সোনালী ব্যাংকের গণভবন শাখায় একটি ব্যাংক হিসাব খোলেন। ওই সময় তার হিসাবে ৬ লাখ ৫৭ হাজার ৫৭৪ টাকা ছিল, যা ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বেড়ে ৯০ লাখ ৩৩ হাজার ৭৪ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
দুদক টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ঢাকার পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে বিধিবহির্ভূতভাবে সরকারি প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগ এনেছে। দুদকের আইনজীবীরা দাবি করেন, প্লট পাওয়ার যোগ্যতার নিয়ম এড়াতে তিনি রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করেছেন। টিউলিপের খালা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং মা শেখ রেহানাও এই একই অভিযোগে অভিযুক্ত।
দুদকের আইনজীবী মোহাম্মদ সুলতান মাহমুদ ব্রিটিশ গণমাধ্যমকে জানান, টিউলিপ সিদ্দিক একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি হিসেবে বাংলাদেশি পাসপোর্ট, পরিচয়পত্র ও ভোটার নিবন্ধন গ্রহণ করেছেন, যদিও তিনি বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নেই বলে দাবি করে আসছেন।
এই অভিযোগগুলো প্রমাণিত হলে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আইনে বিচার চলতে কোনো বাধা থাকবে না। একইসঙ্গে, যদি তিনি ব্রিটিশ ট্যাক্স ফাইলে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বা ট্যাক্স ফাইল সংক্রান্ত তথ্য গোপন করে থাকেন, তাহলে ব্রিটেনের আইনেও তার বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে।

