চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বেহাল দশা এবং ঘন ঘন দুর্ঘটনার প্রতিবাদে সড়কটি দ্রুত ছয় লেনে উন্নীত করার দাবিতে আবারও আন্দোলনে নেমেছেন স্থানীয়রা। দীর্ঘদিন ধরে কর্তৃপক্ষের আশ্বাস সত্ত্বেও কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ না থাকায় সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের চেরাগি পাহাড় মোড়ে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ছয় লেন বাস্তবায়ন পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন এবং দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, দেশের অন্যতম ব্যস্ত এই মহাসড়কটি এখন ‘মৃত্যুফাঁদে’ পরিণত হয়েছে। সড়কের অনেক জায়গা পাড়ার গলির চেয়েও সরু। জাঙ্গালিয়ার মতো কিছু অংশ অত্যন্ত ঢালু ও আঁকাবাঁকা, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তোলে। এছাড়াও, রাতে লবণের গাড়ি চলাচলের কারণে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে যায়, যা দুর্ঘটনার আরেকটি বড় কারণ। প্রতিটি দুর্ঘটনার পর কর্তৃপক্ষ কেবল সড়ক প্রশস্ত করার আশ্বাস দিলেও বাস্তবে কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না।
বক্তারা আরও বলেন, দক্ষিণ চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে এই সড়কের উন্নয়নের দাবি জানাচ্ছেন। কিন্তু সরকার কেবল আশ্বাস দিলেও কাজের অগ্রগতি দৃশ্যমান নয়। এ অবস্থায় দ্রুত ছয় লেনের কাজ শুরু না হলে তারা আরও বড় আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ছয় লেন বাস্তবায়ন পরিষদের সমন্বয়ক মিনহাজুল ইসলামের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন দৈনিক আমাদের সময়ের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান হামিদ উল্লাহ, বিয়াজ উদ্দিন বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক, পরিষদের সমন্বয়ক শফিকুল আলম, মুজিবুল হক, রুনা আনসারী, আইনজীবী জিয়াউর রহমান, আবু বক্কর সাবিত, ইফতেখার নূর তিশন, মিজানুর রহমান ও সাইমুম আল মুরাদসহ অনেকে।
বক্তারা জানান, এর আগেও একই দাবিতে গত ৬ এপ্রিল নগরীর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছিল।
এরপর ১১ এপ্রিল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের কাছেও স্মারকলিপি দেওয়া হয়। কিন্তু দীর্ঘ দিন পেরিয়ে গেলেও কোনো বাস্তব পদক্ষেপ না নেওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে নতুন করে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এই মহাসড়কটি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পরিবহনে এবং পর্যটন নগরী কক্সবাজারে যাতায়াতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এর করুণ অবস্থার কারণে ঘন ঘন দুর্ঘটনা ঘটছে, যা কেবল জানমালের ক্ষতিই করছে না, একই সাথে অর্থনীতিতেও বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
মানববন্ধন থেকে বক্তারা জোর দাবি জানান, সরকার যেন দ্রুত এই সড়কের উন্নয়নে কাজ শুরু করে এবং জনগণের ভোগান্তি লাঘবে পদক্ষেপ নেয়। অন্যথায়, বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, সরকার যদি তাদের দাবি মেনে দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে তারা আরও বড় পরিসরে আন্দোলন শুরু করবেন। এতে সড়ক অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচিও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

