স্নাতক করা ছয় শতাধিক তরুণের অংশগ্রহণে কক্সবাজার চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (সিবিসিআই) ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)—এর যৌথ উদ্যোগে সফলভাবে সম্পন্ন হলো ‘ক্যারিয়ার কার্নিভাল ২০২৫’। এই চাকরি মেলা কক্সবাজারের তরুণদের কর্মজীবনে প্রবেশে এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (সিবিসিআই) এবং ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রি স্কিলস কাউন্সিল এর যৌথ উদ্যোগে, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)—এর বাস্তবায়নে এবং যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সহযোগিতায় “ ইম্প্রোভিং স্কিল এন্ড ইকোনমিক অপর্চুনিটিস ফর ওমেন এন্ড ইউথ ইন কক্সবাজার (আইজেক) প্রকল্পের আওতায় এই বৃহৎ চাকরি মেলার আয়োজন করা হয়।
দিনব্যাপী এই আয়োজনে আতিথেয়তা (হসপিটালিটি), তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি), কনস্ট্রাকশন, তৈরি পোশাক, কেয়ারগিভিংসহ বিভিন্ন খাতের ৩০টিরও বেশি শীর্ষস্থানীয় চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এটি চাকরিদাতা, বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রির নেতৃবৃন্দ, প্রশিক্ষণ সংস্থা ও দক্ষ তরুণ—তরুণীদের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে।
ক্যারিয়ার কার্নিভালের মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রশিক্ষিত তরুণদের জন্য সরাসরি চাকরির সুযোগ সৃষ্টি, বেসরকারি খাত ও দক্ষ কর্মশক্তির মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ় করা এবং কক্সবাজারের সম্ভাবনাময় মানবসম্পদকে উৎপাদনশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মপরিবেশে সম্পৃক্ত করা।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কক্সবাজার চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রী’র সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান।
ড. সাইফুজ্জামান বলেন, “কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা উন্নয়নের ক্ষেত্রে কক্সবাজার আগামী দিনে একটি সম্ভাবনাময় জেলা। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর বাজারচাহিদার ভিত্তিতে এই অঞ্চলের তরুণ সমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরের উদ্যোগ গ্রহণ করবে।”
আইএলও’র প্রজেক্ট ম্যানেজার সিরাজুল ইসলাম বলেন, “এই মেলাটি শুধু একটি চাকরি মেলা নয়, এটি দক্ষতা ও সুযোগের মধ্যে এক দৃঢ় সংযোগ তৈরি করেছে। আমরা তরুণদের, বিশেষ করে নারীদের, মানসম্পন্ন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং স্থানীয় অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে কাজ করছি।”
কক্সবাজার চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রী’র সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী বলেন, “এই জব ফেয়ার আমাদের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন—দক্ষতাকে টেকসই জীবিকায় রূপান্তরিত করার পথে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সিবিসিসিআই এর উদ্যোগে এখন পর্যন্ত ৭৮০ জন তরুণ—তরুণী প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছেন, যাদের মধ্যে প্রায় ৪০০ জন ইতোমধ্যে অর্থপূর্ণ কর্মসংস্থান নিশ্চিত করেছেন।”
আইজেক প্রকল্পটি গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা এর অর্থায়নে পরিচালিত। প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত ২০,০০০ এরও বেশি তরুণ—তরুণী বিভিন্ন দক্ষতা প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছেন, যার মধ্যে প্রায় ৭৩ শতাংশ ইতোমধ্যে চাকরি পেয়েছেন বা স্বাবলম্বী হয়েছেন।
দিনব্যাপী আয়োজনে চাকরিদাতারা প্রার্থীদের তাৎক্ষণিক সাক্ষাৎকার নেন এবং জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করেন। বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৮৩২টি বায়োডাটা জমা পড়ে, তারমধ্যে ১১৯ জনকে ইন্টারভিউ এর জন্য ডাকা হয়েছে এবং ৯ জনের চাকরি নিশ্চিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের যুগ্ম সচিব কাজী মোখলেসুর রহমান, পরিচালক (প্রশাসন) এম. এ. খায়ের, বাংলাদেশ টুরিজম করপোরেশন এর পরিচালক মহিউদ্দিন হেলাল, কক্সবাজার জেলা প্রশাসন এর সহকারী কমিশনার (এনজিও সেল), ফিরোজা আক্তারসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
এই ক্যারিয়ার কার্নিভাল কক্সবাজারকে দক্ষ মানবসম্পদের এক সম্ভাবনাময় কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

